জাকির সিকদারঃ সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারদলীয় ও স্বতন্ত প্রার্থী সমর্থনে দুগ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সাভার মডেল থানায় ৮৭ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামী হিসেবে কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খানকে প্রধান আসামী করে ২৭ জনে নাম উল্লেখ করে ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন নিহত হাজী শহিদুল্লাহর মেয়ে মোসা: রুবিনা আক্তার। মামলা নং (২৩)। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানা পুলিশ কাউন্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান ও তার দেহরক্ষী সমির আলীকে গ্রেফতার করে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত রিমান্ড না মঞ্জুর করে সাইফুল ইসলামকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
তবে সাইফুল আলম খানের দেহরক্ষী সমির আলীর ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে কাউন্দিয়া ইউনিয়নে নিহতের ঘটনায় কাউন্দিয়া জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া এলাকার লোকজন ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। একই সাথে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারেও ভাটা পড়েছে।
এ ঘটনায় শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। ফলে অজানা ভয় বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
হত্যা মামালার প্রধান আসামী সাইফুল আলম খানের রিমান্ড মঞ্জুর না করে জেল হাজতে প্রেরণ করায় নিহত পরিবার ন্যায় বিচার পাবে না বলে পরিবারের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। নিহতের মেয়ে মামলার বাদী রুবিনা আক্তার জানান, সাইফুল আলম খান একজন কুখ্যাত খুনি। সে আমার বাবার হত্যাকারী হিসেবে মামলার ১ নম্বর আসামী। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করেছে। কিন্তু আদালত তাকে রিমান্ডে না দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। তাতেই বুঝা যাচ্ছে, আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার আমরা পাবো না।
আদালতের উচিত ছিল এই কুখ্যাত খুনির রিমান্ড মঞ্জুর করে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তী আদায় করা।।
মামলার আসামীরা হলেন, সাভার উপজেলা মেলারটেক গ্রামের বাসিন্দার মৃত জানে আলম খানের ছেলে মো: সাইফুল আলম খান (৫৩), সেলিম খানের ছেলে নাবিল খান (২৬), ভাষানটেক থানার মাটিকাটা গ্রামের বাসিন্দা সমির আলী (৪৭), শেরপুরের নকলা থানার কাজাইকাটা গ্রামের মৃত লতিফ মাস্টারের ছেলে মশিউর (৪৫), সাভার থানা ঘাসিরদিয়ার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে মো: অজল হক (৫৪) ও মেছের আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ফরিদ (৪৮), সাভার থানার কুমারীবাড়ি গ্রামের সামসুল মিয়ার ছেলে আলমাছ (৩৮), কাউন্দিয়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে মো: জাহাঙ্গীর (৩৫), সাদারবাড়ী গ্রামের মৃত গেদু খলিফার ছেলে মো: আবু তালেব (৩০), কাউন্দিয়ার মধ্যপাড়ার মৃত লোকমান আলী মোল্লার ছেলে শফীক (৪২), কাউন্দিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সোহেল (১৮), কুমারবাড়ী গ্রামের মৃত অলি মিয়ার ছেলে খালেক (৫২), মানিকারটেক গ্রামের মৃত মুন্নাফের ছেলে মো: শফি মিয়া (৫০) ও মৃত আনসার আলীর ছেলে বসির (৪২), কাউন্দিয়া গ্রামের মৃত জমসের আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর (৪০), কুমারবাড়ী গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে শাজাহান (৫২), নবী হোসেন (৫২), মৃত গোপালের ছেলে লিয়াকত (৫০), কাউন্দিয়া গ্রামের মৃত ছিদ্দিক খলিফার ছেলে সুরুজ্জমান (৫০) ও মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো: মজিবর (৫১) বুরিরটেক গ্রামের মেছের আলীর ছেলে পিকলু (৪০), বাকসাত্রা গ্রামে মব্বত আলীর ছেলে মো : হান্নান (৫২) ও মৃত সামাদ বেপারীর ছেলে মোহাম্মাদ আলী (৫০), কাউন্দিয়া গ্রামের হাজী সিরাজের ছেলে মো: তারেক (৩১), কাউন্দিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সজল (৩৮), গোয়ালবাড়ী গ্রামের মো: সাইদুর রহমান সম্ভু (৪২), ব্রাম্মাণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার মো: ইন্তাজ আলীর ছেলে রিপন (৩৮)সহ ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামী রেখে সাভার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত শহিদুল্লাহর মেয়ে রুবিনা আক্তার।
এই মামলা ধারাসহ অপরাধ এবং লুন্ঠিত দ্রব্যাদি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪৩/৩৪/১১৪/৩০২/৩০৭/৩২৬/৩২৫/
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ওসি তদন্ত ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, কাউন্দিয়া ইউনিয়নের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত শহিদুল্লাহর মেয়ে সাভারা মডেল থানায় কাউন্দিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এঘটনায় আমরা সাইফুল ইসলাম ও তার দেহরক্ষী সমিরকে আটক করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করি। আদালত রিমান্ড না মঞ্জুর করে সাইফুল ইসলাম খানকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। তবে তার দেহরক্ষী সমিরের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ৪ জুন সাভার উপজেলায় ৬ষ্ঠ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের সিংগাসা গ্রামে এলাকার আলী আহম্মদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে পথসভা করছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত প্রার্থী আনারস মার্কার আতিকুল ইসলাম খান শান্ত। এ সময় আওয়মী লীগ দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খান স্বতন্ত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম খান শান্তুর সমর্থকদের দুই পাশ থেকে ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে এবং সংঘর্ষে আনারস মার্কার সমর্থক হাজী শহিদুল্লাহসহ তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ হাজী শহিদুল্লাহকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় সাইফুল আলমের সর্মথকদের এলোপাথরি হামলায় শান্তুর খানের প্রায় আরো ৩০ জনের মতো সর্মথক আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে এনাম মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে।